মাদাম তুসোতে সচিন তেন্দুলকর |
গোটা সপ্তাহ কাজ করে পৌছে গেলাম পরের উইকেন্ডে। শুক্রবার দিন অফিসের পর আমার এক কলেজের সহপাঠী রোহানের সাথে দেখা করতে গেলাম হার্লো তে। হার্লো একটি ছোট যায়গা লন্ডন থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে। শনিবার টা ওর বাড়িতে কাটিয়ে লন্ডন ফেরত এলাম রাত ১১ নাগাদ। রবিবারের প্ল্যান বানিয়ে নিলাম। ঠিক করলাম বিখ্যাত মাদাম তুসো মিউসিউমে যাবো। নানা দেশের বিভিন্ন নাম করা ব্যক্তিদের মোমের পুতুল স্থাপিত আছে ওখানে। জানতে পারলাম যে অনলাইন টিকিট বুক করলে কিছুটা সস্তা হয় আর লাইনে দাড়ানোর ঝনঝাট থাকে না।
মাদাম তুসো যাওয়ার জন্য নামতে হয় বেকার স্ট্রিট টিউব স্টেশনে। জুবিলি এবং বেকার্লু লাইন নিয়ে পৌছে গেলাম বেকার স্ট্রিট। বেরিয়ে ২ মিনিট হেটেই মাদাম তুসো। ঢুকেই প্রথমে ২ তলায় চলে যেতে হয়। ওখান থেকেই শুরু। প্রথম ঘরে ঢুকেই আমাকে স্বাগত জানালেন ফিল্ম জগতের অজস্র তারকারা। হলিউডের অনেকে তো আছেনই , তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন আমাদের বলিউদের তারকারা। এক কোনে দাড়িয়ে আছেন মাধুরী দিক্ষিত, অমিতাভ বচ্চন, ঋতিক রোশন, সালমান খান, ঐশর্য রাই এবং শারুখ খান। খুবই সাভাভিক যে অনেক ভারতীয় তাদের সাথে দাড়িয়ে ছবি তুলছে। হলিউড তারকাদের পুতুল একেবারে আসল লাগছিল আর মনে হচ্ছিলো যে মানুষটি সত্যি আমাদের সঙ্গে দাড়িয়ে আছে। অথচ লক্ষ্য করলাম যে ভারতীয় তারকাদের পুতুল একেবারেই ভালো হয়নি। যেমন মাধুরী দিক্ষিত কে তো চেনাই যাচ্ছিল না। দেখলে হয়ত উনি নিজেই চিনতে পরতেন না নিজেকে। পরের ঘরটা হলো যেটা দেখার জন্য আমি সব থেকে বেশি উত্সুক যেটা হলো খেলোয়ারদের ঘর। ঢুকেই দেখা হলো রাফেল নাদাল, মোহাম্মদ আলি , বরিস বেকার , ব্রায়ান লারা এবং আমাদের সকলের প্রিয় সচিন তেন্ডুলকর এর সাথে। বোঝাই যাচ্ছে ছবি তোলার জন্য অনেক ভীড়। আমি একা, তাই যাকে পারছি তাকে বলছি একটা ছবি তুলে দিতে। বেশ ভালোই মজা লাগছিলো। পাশের ঘরে গিয়ে আরো অনেক চেনা তারকাদের সাথে দেখা হলো – বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট দরজার পাশেই জেতার উল্লাসে মেতে ছিলেন। আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছেন ফুটবলের তারকারা – ডেভিড বেকহাম, পেলে এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। তারপর দেখলাম রানী সহ পুরো রাজ পরিবার । সঙ্গীত জগতের তারতকদের মধ্যে ছিলেন মাইকেল জাকসন, এল্ভিস প্রেস্লি, বীটেল্স এবং আরও অনেকে যাদের আমি ঠিক চিনি না । সব শেষে দাড়িয়ে আছেন বিশ্বের সনামধন্য নেতারা, যাদের মধ্যে অনেকেই পুরো পৃথিবীর ইতিহাসতাকেই বদলে দিয়েছেন । মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, বেনজীর ভুট্টো, নেলসন মান্ডেলা এবং দালাই লামার চেহারা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়লো । তাছাড়া দেখলাম চার্চিল এবং হিট্লর একেবারে পাশাপাশি দাড়িয়ে । সে এক অদ্ভুত দৃশ্য । ভাবলাম এই বুঝি বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলো বলে। পুতুল দেখার পালা এখানেই শেষ। এবার নীচের তলায় আছে চেম্বার ওফ হরার্স। মানে আপনি যদি ভয় পেতে চান তাহলে এখানে কিছু সময় কাটাতে পারেন। তারপর একটা দারুন জিনিস দেখলাম যেটা ঠিক লিখে বোঝানো যাবে না। সেটা হলো ‘স্পিরিট অফ লন্ডন’ টূর। একটা ট্যাক্সির মতো রং করা রোলার কোস্টার জাতীয় জিনিসে চড়ে লন্ডনের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে একটা যাত্রা। পুরো ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগলো। এর পর শুধু বাকি ছিলো একটা ৩ডি ফিল্ম দেখা। সেটা সেরে নিয়ে দেখলাম যে ৩ ঘন্টা কেটে গেছে। বিকেল ৫টা বেজে গেছে তাই ঠিক করলাম এবার চলে যাবো লন্ডন আই এর দিকে। অন্ধকার হয়ে গেছে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়েই চলেছে, তার সঙ্গে বেকার স্ট্রীট আলোয় মেতে উঠেছে। বেকার স্ট্রীট বিখ্যাত হওয়ার আর একটা কারণ আছে। সেটা বলাই বাহুল্য শার্লক হোম্স এর জন্য। ২২১বি বেকার স্ট্রীটএ এখন একটা মিউজিয়াম আছে যেখানে শার্লক এর কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে জড়িতো কিছু জিনিস রাখা আছে যেমন তাঁর পাইপ এবং টুপি। ৩ বছর আগে যখন লন্ডন ঘুরতে এসেছিলাম তখন এই মিউজইউম দেখা হয়ে গেছে তাই এবারে আর গেলাম না। চলে গেলাম ওয়াটার্লু যেখানে আছে লন্ডন আই।
আলোক শজ্যায় লন্ডন |
নদীর ধারে শীতটা একটু বেশিই করছিল। খুব কনকনে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিল। টিকিট কাটার কোনো ঝামেলা নেই। তাই সোজা চলে গেলাম একটা কাঁচের বাক্সের মত ঘরে যেখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন ধরে যায়। এই কাঁচের বাক্সটা লাগানো আছে এক বিরাট জাইয়ান্ত হুইলে অর্থাৎ একটা বিশাল চাকার সাথে। এই চাকা ঘুরতে থাকবে আর ওই কাঁচের বাক্স আমাদের নিয়ে ওপরে উঠে যাবে আর ঘুরে আবার একই জায়গায় নামিয়ে দেবে। মুহুর্তের মধ্যেই ভরে গেলো কাঁচের বাক্স আর দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কাঁচ দিয়ে এখন দেখা যাচ্ছে টেম নদী আর তার ওপারে বিগ বেন। পার্লামেন্টে তেমন আলো জ্বলছিল না তাই ভালো করে দেখা গেল না। চাকা খুব আসতে ঘুরছিল। একেবারে বোঝাই যায় না যে আমরা ওপরে উঠে চলেছি। হঠাত দেখি আলোক শয্যায় সজ্যিত পুরো লন্ডন শহর দেখা যাচ্ছে। এক অদ্ভুত দৃশ্য। অনেক ছবি তুললাম। শহরের বিভিন্ন উঁচু বাড়িগুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। লন্ডনের সব থেকে উঁচু বাড়ি শার্দ টাওয়ার দেখা যাচ্ছিল আর দুরে দেখা গেল কানারি ওয়ার্ফের উঁচু অফিসের বাড়িগুলো। ওইখানেই আমার অফিস তাই দেখে খুব ভালো লাগলো।
1 Comment
Excellent piece because as you read you feel you are a spectator.
Dadubhai